Captur কি ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ডুকতে গেলে কেন কেপচার ভেরিফিকেশন চায়?

ইন্টারনেটে বিভিন্ন একাউন্টে সাইন আপ করতে গিয়ে, ওয়েবসাইটে ঢুকতে গিয়ে বা অনলাইনে টিকেট কাটতে গিয়ে আমরা প্রায়ই একটা পরীক্ষার সম্মুখীন হই- কিছু আঁকাবাঁকা অক্ষর বা সংখ্যা দেখিয়ে তা টাইপ করতে বলা হয়। অনেকসময় ৮-১০টা ছবির মধ্যে কিছু বিশেষ বস্তুর ছবি (যেমন গাড়ি, দোকান, জেব্রা পাসিং ইত্যাদি) চিহ্নিত করতে বলা হয়। এই পরীক্ষায় পাশ করতে সাধারণত খুব বেশি বেগ পেতে হয় না, প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দুয়েকবার চেষ্টা করলেই হয়ে যায়। ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর মাঝে এমন ব্যাঘাত অনেক সময়ই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেকের জন্য।
এই ক্যাপচা জিনিসটা কি, এটি কেন ব্যাবহার করা হয় এবং এটার উপকারিতা সেটা নিয়েই আজকে আলোচনা করব। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক। যদি না জেনে থাকেন, তাহলে প্রথমেই জানা যাক,
ক্যাপচা কি?
ক্যাপচা কিন্তু আসলে কোন বাংলা শব্দ নয়। এটি কোন ইংলিশ শব্দও নয়। এটি শুধুমাত্র একটি অ্যাব্রিভিয়েশন। অর্থাৎ, কয়েকটি ইংলিশ শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়ে তৈরি একটি শব্দ বা ওই শব্দগুলোর শর্ট ফর্ম। ক্যাপচা শব্দটি আসলে CAPTCHA এভাবে লেখা হয়। এর ফুল ফর্ম হচ্ছে,
Completely Automated Public Turing test to tell Computers and Human Apart একে HIP বা Human Interaction Proof ও বলা হয়।
সোজা কথায় বলতে হলে, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ এবং বট বা রোবটকে আলাদা করা সম্ভব হয়। কম্পিউটার বা স্মার্টফোন স্ক্রিনের বাইরে বসে যে এটাকে অপারেট করছে সে কি কোনো সত্যিকারের মানুষ নাকি কোনো রোবট তা পরীক্ষা করার জন্যই এই ক্যাপচার সৃষ্টি। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে এই উদ্ভট সন্দেহটি হটাত কেনো কারও মাথায় এলো এবং এই জিনিসটির সৃষ্টিকর্তা কে?
ক্যাপচার জনক বা সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন, লুইস ভোন আহন (Luis Von Ahn)। এই লোকই হচ্ছেন এইসব ক্যাপচা সম্পর্কিত ঝামেলাগুলোর সৃষ্টিকর্তা। যদিও ইনিই একমাত্র কুলপ্রিট নন। এখানে গুগলেরও বেশ বড় একটা ভুমিকা আছে। এই ক্যাপচা সম্পর্কিত ঝামেলার জন্ম হয় ১৯৯৭ সালে কিন্তু এটির তখনো অফিশিয়ালি কোন নামকরণ করা হয়নি। এটির নাম CAPTCHA দেওয়া হয় ২০০৩ সালে।
এই তথ্যটুকু জানার পর আমার মাথায় প্রথম যে প্রশ্নটুকু এসেছিল তা হল- কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা রোবট কেন ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করতে যাবে? জিমেইলে একটা একাউন্টে খুললে কম্পিউটার প্রোগ্রামের কি লাভ আর গুগলেরই বা কী ক্ষতি?
কি কি ক্ষতি হতে পারে সেটা একটু দেখা যাক-
এখন দেখা যাক এই ক্যাপচা টেস্ট কিভাবে কম্পিউটার প্রোগ্রামকে প্রতিহত করে। ক্যাপচা টেস্টে যে “টাস্ক” গুলো দেয়া হয়, সেগুলো এমনভাবে তৈরী করা হয় যেন মানুষ সহজেই করে ফেলতে পারে, কিন্তু কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা আটকে যাবে। অক্ষরগুলো একটু আঁকাবাঁকা করে দেয়া হয় এবং অডিও টেস্টে একটু অপরিষ্কার শব্দ শোনানো হয়, যেন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে এগুলো ধরা সম্ভব না হয়। একটা কথা মনে করিয়ে দেই, সায়েন্স ফিকশন সিনেমায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার যে উৎকর্ষ দেখানো হয় সে তুলনায় বাস্তব অগ্রগতি বেশ পিছিয়ে আছে, আমাদের চোখে যে সমস্যা অতি সাধারণ, কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো সে সমস্যার সমাধান করতে পারে না। এবং এর ফলে সেই প্রোগ্রাম ওয়েবসাইটে ঢোকা বা একাউন্ট খোলার মত কাজগুলো করতে পারে না।
ক্যাপচা কেন দরকার?
ক্যাপচা মুলত প্রথম তৈরি করা হয় স্প্যামিং আটকানোর উদ্দেশ্যে, যদিও এখন আরো অনেক উদ্দেশ্যেই ক্যাপচা ব্যাবহার করা হচ্ছে। আচ্ছা, বুঝলাম। কিন্তু ক্যাপচা কিভাবে স্প্যামিং আটকাবে? ধরুন, আজকে একটি নতুন জনপ্রিয় মুভি রিলিজ হয়েছে একটি সিনেমা হলে। নতুন মুভি হওয়ায় প্রথমদিন সাধারনের থেকে অনেক বেশি মানুষ আগ্রহী হবে সিনেমা হলে গিয়ে মুভিটি দেখার জন্য। যার ফলে প্রথমদিন মুভির টিকেটের চাহিদাও সাধারণের তুলনায় বেশি হবে। এখন এই সুযোগে কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রামার এমন কোন ইন্টেলিজেন্ট প্রোগ্রাম তৈরি করবে যার সাহায্যে সে প্রথমদিনই অনলাইন থেকে সবগুলো টিকিট একাই কিনে নেবে। এটা করতে হলে তার অবশ্যই একটি শক্তিশালী বট বা প্রোগ্রামের দরকার হবে, কারন সে একা এই কাজটি কখনোই করতে পারবে না। এই বট বা প্রোগ্রামের সাহায্যে সে সবগুলো টিকিট আগে থেকে কিনে নেবে এবং এরপরে শুরু করবে ব্ল্যাক মার্কেটিং। টিকিত আউট অফ স্টক হওয়ায় এবং টিকিটের চাহিদা বেশি হওয়ায় সে এই টিকিটগুলো নিজে যে দাম দিয়ে কিনেছে, তার থেকে আরও বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে।
এই ধরনের অবৈধ কাজ আটকানোর জন্যই ক্যাপচার দরকার হয়। এই ধরনের কাজ আটকাতে হলে সার্ভারের বোঝা প্রয়োজন যে, যে ডিভাইস দ্বারা এই সার্ভারটি অ্যাক্সেস করা হচ্ছে সে কি কোনো সত্যিকারের মানুষ অপারেট করছে নাকি কোনো প্রোগ্রামারের তৈরি কোনো বট। এটা আগে থেকে বুঝতে পারলেই এই সম্পূর্ণ প্রোসেসটি আটকানো সম্ভব হবে। তার জন্য ঠিক সার্ভারটি অ্যাক্সেস করার আগের মুহূর্তে এমন কিছু টাস্ক দেওয়া প্রয়োজন যেগুলো মানুষের জন্য করা খুবই সহজ কিন্তু কম্পিউটার বা রোবটের জন্য করা খুবই কঠিন।
ঠিক এই কনসেপ্ট থেকেই ক্যাপচার সৃষ্টি এবং ক্যাপচার ব্যাবহার শুরু হয়। তো, ক্যাপচাতে মুলত কিছু ইংলিশ অ্যালফাবেট বা কোন নাম্বার বা দুটিই একসাথে দেওয়া হয় কিন্তু অক্ষরগুলো একটু বিকৃত করে দেওয়া হয়। এমনভাবে বিকৃত করা হয়, যেন তা দেখে মানুষের ব্রেইন সহজেই বুঝতে পারে যে কোনটি আসলে কোন অক্ষর কিন্তু কোনো প্রোগ্রাম বা কোনো রোবট তা বুঝতে পারেনা। এখন আপনাকে বলা হয় যে ওই অক্ষরগুলোকে আবার লিখতে। যদি আপনি মানুষ হন এবং বুঝতে পারেন যে কোনটি কোণ অক্ষর, তাহলে আপনি সহজেই সেটি ইন্টার করে সার্ভারটি বা ওয়েবসাইটটি অ্যাক্সেস করতে পারবেন। কিন্তু কোন প্রোগ্রাম বা কোন রোবট তা পারবে না। কারন, ওরা বুঝতেই পারবে না যে এগুলো কোনো অক্ষর কিনা। ইন্টার করা তো দুরের কথা !
ঠিক এইভাবে কোন ওয়েবসাইটে কোন রোবট বা কোন অটোমেটেড প্রোগ্রামকে ঢুকতে দেওয়া থেকে আটকানো হয়। যার ফলে ওই ওয়েবসাইটে স্প্যামিং হওয়ার আশংকাও অনেক কমে যায়। কারন, অধিকাংশ স্প্যামিং অটোমেটেড স্ক্রিপ, প্রোগ্রাম বা বট দ্বারাই করা হয়। কিন্তু প্রতি বছর টেকনোলজি যত উন্নত হতে শুরু করল, প্রোগ্রাম বা রোবটও একইসাথে আরও ইন্টেলিজেন্ট এবং উন্নত হতে শুরু করল। এরপর এমন একটা সময় আসলো, যখন এই পদ্ধতিটি আগের মত রিলায়েবল থাকলো না। তখন দেখা গেল যে, প্রোগ্রাম এবং রোবটরাও এই ধরনের ক্যাপচা সমাধান করতে পারছে, কারন তারা আগের থেকে অনেক বেশি ইন্টেলিজেন্ট এবং স্মার্ট। তখন এই সমস্যা সমাধান করার জন্য গুগল একটি নতুন পদ্ধতি নিয়ে হাজির হল যার নাম ↓
নো-ক্যাপচা রি-ক্যাপচা
এখন, এই নোক্যাপচা রিক্যাপচা আবার কি? আসলে এটিও আগের মতই একটি ক্যাপচা, কিন্তু এটি আগেরটার থেকে অনেক বেশি স্মার্ট এবং ইন্টেলিজেন্ট। যখন গুগল দেখলো যে আগের পদ্ধতিটি আর কার্যকর নয়, তখন তারা ভাবতে শুরু করল যে, এর থেকেও কঠিন আর কি তৈরি করা যায় যেটা মানুষের জন্য হবে আরো বেশি সহজ এবং রোবটের জন্য আরও বেশি কঠিন? এবং তারা অনেক ভেবে এর একটা ভাল উপায়ও পেয়ে গেল। এবার তারা চিন্তা করল যে ক্যাপচাতে টেক্সট এর পরিবর্তে তারা কিছু ছোট ছোট ছবি দেবে এবং সবাইকে বলা হবে ওই ছবিগুলো থেকে নির্দিষ্ট একটি অবজেক্ট খুজে বের করে মার্ক করতে।যেমন, হয়ত আপনাকে কিছু ছোট ছোট ছবি দেওয়া হবে এবং বলা হবে ওই ছবিগুলো থেকে যেসব ছবিতে কোনো রোড সাইন আছে সেগুলো মার্ক করতে হবে অথবা একটি বড় ছবির মধ্যে থেকে ছবির মধ্যে যে যে অংশে কোনো গাড়ি আছে, সেই অংশগুলো মার্ক করতে হবে। যতক্ষন না পর্যন্ত আপনি সঠিকভাবে এটা করতে পারছেন, ততক্ষন আপনাকে সাইটটি অ্যাক্সেস করতে দেওয়া হবে না। আপনি নিজেই ধারণা করতে পারছেন যে এটা মানুষের জন্য কতটা সহজ এবং রোবট বা অটোমেটেড প্রোগ্রামগুলোর জন্য কতটা কঠিন।
এই ক্যাপচা সিস্টেমটিই এখন সবথেকে বেশি ব্যাবহার করা হয় এবং সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। আপনি এই ক্যাপচাটিই বেশি দেখে থাকবেন। আবার অনেকসময় এই ক্যাপচাটি আপনাকে পূরণ করার দরকারও হবেনা। অনেকসময় আপনাকে জাস্ট ক্যাপচাতে ক্লিক করতে হবে এবং কিছুসময় পরে কোনকিছু না করেই আপনাকে মানুষ হিসেবে অ্যাপ্রুভ করে দেওয়া হবে। এটা কিভাবে করা হয়? এই পদ্ধতিটি আরও বেশি স্মার্ট। এই পদ্ধতির পেছনে আছে গুগলের অসাধারন শক্তিশালী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।  এসময় যখন আপনি ক্যাপচার ওপরে ক্লিক করেন, তখন আপনার কাজকর্ম ট্র্যাক করা হয়। কাজকর্ম বলতে আপনার মাউস কার্সর মুভমেন্ট, আপনার ব্রাউজারের কুকি, আপনার আইপি অ্যাড্রেস, আপনার অভারল ব্রাউজিং হ্যাবিট এবং আরো অনেক কিছু যেগুলো গুগল গোপন রেখেছে। মেইনলি আপনার মাউস কার্সর মুভমেন্ট এবং আপনার ব্রাউজারের ডেটা চেক করা হয়।
আপনি যদি মানুষ হন, তাহলে আপনার মাউস কার্সর মুভমেন্ট নির্দিষ্টভাবে হবেনা। অর্থাৎ আপনার মাউস কার্সরটি বিভিন্নভাবে বিভিন্নদিকে মুভ করতে থাকবে। কিন্তু আপনি রোবট হলে আপনার মাউস কার্সরটি সোজাসুজি সরলরৈখিকভাবে ক্যাপচার দিকে যাবে এবং ক্লিক করবে। প্রধানত এইটুকু দেখেই বোঝা যাবে যে আপনি মানুষ নাকি রোবট। আপনি মানুষ কিনা এটা নিশ্চিত হলেই কোনরকম টাস্ক ছাড়াই আপনাকে যেতে দেওয়া হবে। কিন্তু এটা দেখার পরে এবং আপনার ব্রাউজিং হ্যাবিট লক্ষ্য করার পরেও যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তখন আপনাকে ওই ছবি মার্ক করার টাস্কটি দেওয়া হবে।
তো, এই ছিল ক্যাপচা। আশা করি আপনি আগে থেকে ক্যাপচা সম্পর্কে যদি কিছু না জেনে থাকেন, তাহলে এখন কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন এই বিষয়ে।